ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী সুইসাইড করার আগে তার টাইমলাইনে পোস্টগুলো দিয়ে গিয়েছে। খেয়াল করে দেখুন, মৃত্যুর আগে প্রতিটা মুহুর্তে সে জানান দিয়ে গেছে যে, সে চরম ডিপ্রেশানে আছে। আত্মহত্যা করতে চলেছে। কেউ-কেউ হয়তো তাকে ফালতু এটেনশান সিকার ভেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর কেউ-কেউ হয়তো বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন নি যে কিভাবে তাকে সাহায্য করবেন। অনেকে হয়তো তাকে উপদেশ, পরামর্শ, নানা ধরণের ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু সবার আগে আমাদেরকে বোঝার দরকার ‘ডিপ্রেশান’ একটি মারাত্বক সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। যেটা শুধু মানসিক না শারীরিকভাবেও আপনাকে দুর্বল করে দেবে৷ এটার বিভিন্ন স্টেজ রয়েছে। সাধারণ খারাপ লাগা বা প্রাথমিক স্টেজের ডিপ্রেশান অনেকের আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। কারণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের যেমন নিজস্ব ইমিউনিটি সিস্টেম আছে। মানসিক অসুখ থেকে সুস্থ হতেও আমাদের আছে মানসিক শক্তি। অনেকেই স্ট্রং পার্সোনালিটির জোরে কিংবা প্রাইমারি স্টেজ থেকে আপনা-আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে৷ অথবা বন্ধু-পরিবারের সাপোর্ট, ধর্মীয় আচার অনুসরণ করে ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সবাই মানসিকভাবে স্ট্রং না। আর কেউ যদি ডিপ্রেশানের সিরিয়াস স্টেজে পৌঁছে যায় তখন এসব সাধারণ উপদেশ-পরামর্শে তার জন্যে সেরে ওটা অনেক দুরূহ হয়ে ওঠে। আর সে সময়ে একজন এক্সপার্টের হেল্প তার জন্য অবধারিত হয়ে ওঠে। তখনও যদি তাকে হেল্প করা না যায় তাহলে সেটার শেষ পরিণতিই হলো আজকের এই ঘটনা৷
মানসিক অসুখের উপরে বিশেষজ্ঞ সাধারণত ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। কিংবা সাইকিয়াট্রিস্ট। তারা সাইন্টিফিক ওয়েতে মানুষের মানসিক অবস্থা মেজার করেন। আর সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করেন। শরীর যেমন একটি সত্ত্বা মনও একটি সত্ত্বা। শরীরের যেমন অসুখ হয় মনেরও ঠিক তেমনি অসুখ হয়৷ সেটাকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই।
হ্যাঁ, সবাই যে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেই সুস্থ হয়ে উঠবে এমনটা বলা একদমই টিক হবে না। মনে রাখবেন ডাক্তাররাও কিন্তু সব রোগীকে সেইভ করতে পারেন না। কিন্তু চেষ্টা তো করেন। এর মানে তো এই না যে আপনি সুস্থ হবেন কিনা সেই দ্বন্দ্বে ডাক্তারের কাছেই যাবেন না।
অনেকেই আপনাকে যুক্তি দেবে এসব মানসিক অসুখ-টসুখ ফালতু কথা। সাইকোলজি-টাইকোলজি সব ভাঁওতাবাজি। এসব করে কিচ্ছু হবে না।
এখন ধরুন বাজারে আপনি একটি পণ্য কিনতে গিয়েছেন। রাস্তায় একজন পরিচিত লোকের সাথে দেখা হলো। সে আপনাকে বললো, এইসব জিনিস কিনো না। এইগুলাতে কাজ হবে না। আবার অন্য আর একজন বললো, ওমুকের দোকান থেকে নিও না। জিনিস ভালো না। এখন দোকানে গিয়ে দেখলেন হয়তো আসলেই জিনিসটা খুব কাজের না, মানও হয়তো মোটামুটি। কিন্তু যা আছে তাতে আপনার কাজ বেশ ভালো মতোই হবে৷ তাহলে আপনি যদি মানুষের কথা শুনে বাজারে না যেতেন তাহলে কী বুঝতে পারতেন?
মনে রাখবেন বেশিরভাগ মানুষ যারা সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে নিরুৎসাহিত করে তারা নিজেরাই কখনো সেখানে যায়নি। বা সঠিক স্থানে যায়নি। এটা কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের দেশে অনেক অদক্ষ মানুষও এই প্রফেশনে ঢুকে মানুষকে প্রতারিত করছে৷ কারণ, আমাদের দেশে এই বিষয়ে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।
তারপরেও বলবো আমাদের দেশে ও অনেক যোগ্য ব্যক্তি এই প্রফেশনে অবদান রাখছেন। আপনারা তাদের কাছে সেবা গ্রহণ করুন। এর জন্য অনেক বেশি প্রচারণা আর গণসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর আশে-পাশে এই ছেলের মতো যাদের সিভিয়ার মানসিক সমস্যা তাদেরকে সাইকোলজিক্যাল হেল্প নিতে উৎসাহিত করুন। দয়া করে সিরিয়াস কান্ডিশানের পেশেন্টকে নিজেরা কাউন্সেলিং করবেন না। এতে হিতের বিপরীত হতে পারে।
ফাহিম পারভেজ দীপ্ত
বিএসসি (অনার্স)
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
fahim.dipto@gmail.com
👩⚕️ মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পেতে নিম্নের লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেনঃ
www.duos.org.bd/monchithi
ভালো লিখেছেন ভাই।।বাস্তবিকই মানসিক রোগ এবং এর যে চিকিৎসা আছে,তার প্রচার দরকার।